বিনিয়োগকারী ও বাজার বিশ্লেষকরা ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দায়ী করলেও গভর্নর এতোদিন এ বিষয়ে মুখ খোলেননি।
শনিবার এক অনুষ্ঠানে আতিউর বলেন, “২০১০ সালে পুঁজিবাজার যেভাবে উম্মাদের মতো এগোচ্ছিল, সেসময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর সিদ্ধান্ত না নিলে দেশের আট-দশটি ব্যাংক পড়ে যেত। তাই ওইসময় কঠোর হয়ে পুঁজিবাজারকে যেমন বাঁচিয়েছি, ঠিক তেমনি মুদ্রাবাজারকে রক্ষা করেছি।”
বিলম্বিত প্রতিক্রিয়া গভর্নরের, “এতোদিন পর এসে একথা জোর দিয়ে বলতে পারি।”
‘আমি সর্বক্ষণ একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের পক্ষে ছিলাম’ জানিয়ে অনুষ্ঠানে আতিউর বলেন, “পুঁজিবাজার নিয়ে অনেকে অনেক কিছু ভেবেছেন, অনেকে অনেক কথা আমার সম্পর্কে বলেছেন। পরিস্থিতির কারণে কখনো কখনো আমাদের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সন্তান যখন অবাধ্য হয়ে যায়, তখন মাঝেমধ্যে শক্তিশালী সিদ্ধান্ত নিতে হয়।”
তার দাবি, “এতোদিনে প্রমাণিত হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।”
রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সেন্টার ফর নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশি (এনআরবি) আয়োজিত ‘পুঁজিবাজার ও আবাসন খাতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ সম্ভাবনা’ শীর্ষক এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন গভর্নর।
২০১০ সালে পুঁজিাবাজারে শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকায় একপর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের লাগাম টেনে ধরা হয়। ওই সময় অনেক ব্যাংক নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ করে শেয়ারবাজারে।
শেয়ার বাজারে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের অবদান ৩০ শতাংশেরও বেশি।
বাজারের লাগাম ধরে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন বিনিয়োগ বন্ধের পাশাপাশি ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগ তুলে নিতে চাপ তৈরি করে। এরপর বাজারে ধস নামে। প্রতিবাদে দিনের পর দিন বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ চলে মতিঝিলে। সেসময় গভর্নরের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
ওই সময় ঢাকা স্টক একচেঞ্জের প্রধান সূচক প্রায় ৯০০০ পয়েন্টে গিয়ে উঠেছিল। লেনদেন গিয়ে ঠেকেছিল তিন হাজার ২০০ কোটি টাকায়।
গত কিছুদিন ধরে পুঁজিবাজার অনেকটা স্বাভাবিক ধারায় ফিরছে। লেনদেন ও সূচক দুটোই বাড়ছে। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২১ পয়েন্ট বেড়ে ৪৬৪১ পয়েন্টে উঠেছে। লেনদেন হয়েছে ৬০৪ কোটি টাকার শেয়ার।
কিছুদিন আগেও এই সূচক ৪০০০ পয়েন্টের নীচে নেমে এসেছিল। লেনদেন কমতে কমতে ২০০ কোটি টাকায় নেমে এসেছিল।
‘বাজার এখন অত্যন্ত শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে গেছে’ মন্তব্য করে গভর্নর বলেন, “পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিএসইসি, সরকারসহ সবার সম্মিলিত চেষ্টায় এখন বাজার একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে এসে গেছে। আগামী দিনে তা আরও ভালো হবে বলে প্রত্যাশা করছি।”
পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ (এক্সপোজার) প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, “যারা এক্সপোজার নিয়ে ভয় পাচ্ছেন তাদের নির্ভয়ের জন্য বলতে পারি পুঁজিবাজারে যেসব ব্যাংকের সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ ছিল, সেসব ব্যাংক নিজেদের প্রয়োজনেই অতিরিক্ত বিনিয়োগ ইতিমধ্যেই প্রায় সমন্বয় করে ফেলেছে। মাত্র কয়েকটি ব্যাংক এখনো সমন্বয় করে উঠতে পারেনি।”
সেন্টার ফর এনআরবির সভাপতি সেকিল চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, বর্তমান জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান, আহসানুল ইসলাম টিটো, সাবেক সহ-সভাপতি আহমেদ রশীদ লালী, মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আমিন, ঢাকা চেম্বারের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি হুমায়ুন রশীদ, আবাসন শিল্প মালিকদের সংগঠন রিহ্যাবের সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বক্তব্য রাখেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন