নিজস্ব প্রতিবেদক | ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৫
পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত চার মেয়র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। সব মিলিয়ে গতকাল শনিবার বিভিন্ন পৌরসভায় ৩০ জনের মতো মেয়র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেছে। এঁদের বেশির ভাগই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী। তবে মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে এসব প্রার্থী জেলা প্রশাসকের (আপিল কর্তৃপক্ষ) কাছে আবেদন করতে পারবেন।
মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া বিএনপির চার মেয়র প্রার্থী হলেন চাঁদপুরের ছেংগারচরে সারোয়ারুল আবেদীন, ফেনীর পরশুরামের মোস্তাফিজুর রহমান, ফেনী পৌরসভার ফজলুর রহমান ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার গোলাম মুহাম্মদ রাব্বানী। আপিলে প্রার্থিতা ফিরে না পেলে ফেনীর পরশুরাম ও চাঁদপুরের ছেংগারচর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হবেন।
প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিরা জানান, বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বেশির ভাগের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ভোটারের সমর্থনসূচক সইয়ে গরমিল থাকায়। স্বতন্ত্র বিদ্রোহী প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের পক্ষে সই করা ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করতে বাধ্য করেছেন দলীয় প্রার্থীরা।
গতকাল থেকে পৌর নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। আজ শেষ হবে।
চাঁদপুরের ছেংগারচরের রিটার্নিং কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিএনপির প্রার্থী সারোয়ারুল আবেদীনের মনোনয়নপত্রটি অসম্পূর্ণ থাকায় বাতিল হয়েছে। বর্তমানে এই পৌরসভায় একমাত্র প্রার্থী আছেন আওয়ামী লীগের রফিকুল আলম।
ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে ঋণ থাকায় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী গোলাম মুহাম্মদ রাব্বানীর, হলফনামায় সই না থাকায় জাপার প্রার্থী খোরশেদ আলম ও জাল সইয়ের অভিযোগে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। কুমিল্লার হোমনা পৌরসভায় দুই স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। সমর্থকদের সই জাল হওয়ায় এঁদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়।
রিটার্নিং কর্মকর্তা দুলাল তালুকদার প্রথম আলোকে বলেছেন, বরগুনার বেতাগী পৌরসভায় আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান মেয়র আলতাফ হোসেন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম কবির মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানানো হয়, তাদের দলীয় প্রার্থী গোলাম কবির। যে কারণে আলতাফের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তবে নির্বাচনী আইন অনুযায়ী দল থেকে একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলে সব কটিই বাতিল হওয়ার কথা। এ ছাড়া বরগুনা পৌরসভায় খেলাপি ঋণের কারণে জাতীয় পার্টির আবদুল জলিল হাওলাদারের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মুজিবুল হক মালিক এবং দর্শনা পৌরসভাতে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী নাহারুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র সাইফুল ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। আলমডাঙ্গা পৌরসভাতে বাতিল করা হয়েছে আলমগীর হোসেন নামের এক প্রার্থীর প্রার্থিতা। হলফনামায় অসত্য তথ্য দেওয়ার অভিযোগে বাগেরহাট পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হাসিবুল হাসানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
রাজশাহীর বাগমারার ভবানীগঞ্জ পৌরসভায় বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী শাহিনুল ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তাঁর পক্ষে সই করা কয়েকজনের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে বলে রিটার্নিং কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান। নিরাপত্তার কারণে তিনি অভিযোগকারীদের নাম প্রকাশ করেননি। তবে শাহিনুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, তাঁর পক্ষে সই করা কয়েকজন ভোটারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে লিখিত অভিযোগ আনা হয়েছে।
রাজশাহীর আড়ানী পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ পারভেজ ও আবদুল মতিন এবং বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী নজরুল ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। ভোলা পৌরসভায় বাতিল হয়েছে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী খন্দকার আল আমীনের মনোনয়নপত্র। মাগুরা পৌরসভায় বাতিল হয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শাখারুল ইসলামের মনোনয়নপত্র। কুষ্টিয়া পৌরসভায় বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী শামীমুল হাসান, জাপার কে এম জাহিদ ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের আবদুল খালেকের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। জেলার মিরপুর পৌরসভায় বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী সাইফুল হক খান ও ভেড়ামারায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আজগর আলীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন